একবিংশ শতাব্দিতে আইসিটিবিহীন একটি দিনও কল্পনা করা সম্ভব নয়। আইসিটির সর্বমুখী ব্যবহারের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে যোগ দেওয়া কিংবা নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি উভয় ক্ষেত্রে আইসিটিকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না।
নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে তাই আইসিটিতে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিজেকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। সাধারণ অফিস সফটওয়্যারের ব্যবহার, ইন্টারনেট, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ প্রায় সব কিছুতেই প্রাথমিক দক্ষতা না থাকলে আগামীতে কোথাও চাকরি পাওয়া কঠিন হবে। অন্যদিকে প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট বিনির্মাণ, কম্পিউটার নিরাপত্তা ইত্যাদি বিশেষায়িত কাজের চাহিদাও বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্যারিয়ার গঠনের একটি বড় ক্ষেত্র। তথ্য প্রযুক্তির প্রধান উপকরণটি বলা চলে কম্পিউটার। এ কম্পিউটারে যে কতশত কাজ আছে তা কল্পনাতীত। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল, কল সেন্টার ইত্যাদি সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, অফিস অটোমেশন সিস্টেম ডিজাইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মোবাইল কমিউনিকেশন, ডেটা কমিউনিকেশন এমন হাজারটি ক্যারিয়ারের নাম বলা যায় ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রোগ্রামিংয়ে সম্ভাবনার দ্বার দিন দিন উন্মোচিত হচ্ছে। প্রোগ্রামিংয়ের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। সবকিছুই এখন কম্পিউটারাইজড হচ্ছে, বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়েই এ প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপস প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমেই করা। প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে এক সময় অফিসে বসেই ঘরের টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের রোগ নির্ণয় করা যাবে। দিন দিন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আকৃতি ছোট হয়ে আসছে এবং এদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আরও বৃদ্ধি পাবে। রান্না থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা পর্যন্ত সবকিছুই মানুষের হাতের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। এর সব কিছুই পরিচালিত হবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে আমাদের দেশের ভালো প্রোগ্রামাররা দেশে বসেই গুগল, মাইক্রোসফট, ইনটেল, ফেসবুকের মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোর কাজ করতে পারছেন। তাছাড়া ভালো প্রোগ্রামাররা ইচ্ছা করলে নিজেরাই সফটওয়ার ফার্ম খুলতে পারেন।
পেশা হিসেবে প্রোগ্রামিংয়ের আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। কারণ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করার অনেক সুযোগ এখানে রয়েছে। তাই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সরাসরি বিশ্বের নামকরা অনেক সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যেমন মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে অনেকেই নিজের মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের শক্ত অবস্থান করে নিচ্ছে এই সব বিখ্যাত কোম্পানিতে। আর একটি মজার ব্যাপার হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বড় কোম্পানিতে আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। তারা নিজেরাই বিভিন্ন দেশ থেকে ভালো ভালো প্রোগ্রামারকে খুঁজে বের করে নেয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে কাজ করার রয়েছে আরও সুবিধা। এতে কোন অফিসে না গিয়েই কাজ করার সুযোগ রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর ভালো ভালো কোম্পানি তাদের নিজেদের দেশের কর্মীদের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কর্মীদের কাজ করার সুযোগ দেয়। আমাদের দেশের কর্মীরা বিশ্বমানের। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রোগ্রামারসহ অনেক আইসিটি কর্মী ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করছে আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর বড় বড় কোম্পানিতে।
ফ্রিল্যান্সের কাজ করার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য ইংরেজি ভাষায় ভালো দক্ষতা থাকলেই চলে। এছাড়াও আইসিটিতে রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এ কাজ করার সুযোগ। যেসব কোম্পানি নিজেরা সার্ভার ব্যবহার করে তাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ লোকের প্রয়োজন হয়। তাই চাকরির বাজারে এর অবস্থানও অনেক ভালো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে বেশ কিছু সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি হয়েছে যারা বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপস পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রপ্তানি করছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থী এই পেশার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে এই সেক্টরে আরও অনেক দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। কাজেই ক্যারিয়ার হিসেবে আইসিটির সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল। এসব বিবেচনা করে নিজের আইসিটি দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে এখন থেকেই সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন ।
Read more